আমের মৌসুম তখন পুরোদমে চলছে। বেলা, আমার শাশুড়ী, উঠানে এক ঝুড়ি আম নিয়ে বসে ফলের রস এক এক করে ছেঁকে তেল মাখা মাটির ছাঁচে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। স্তরের পর স্তর রস প্রয়োগ করা হয়েছিল, যতক্ষণ না ছাঁচের উপর আবরণ যথেষ্ট পুরু হয়। তারপর ছাঁচগুলি একটি প্লেটে নামিয়ে , একটি মসলিন কাপড় দিয়ে ঢেকে, রোদে শুকানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়। তিনি আমসত্ত প্রস্তুত করছিলেন – স্বচ্ছ, সোনালি, মিষ্টি এবং টক ওয়েফার বা চাকতি, স্পর্শে একটু আঠালো। দুটি চার ইঞ্চি ব্যাসের কালো মাটির ছাঁচে সরু ঘনকেন্দ্রিক বৃত্ত দিয়ে খোদাই করা , একে অপরকে ক্রস করে ফুলের আকার তৈরি হয়েছে, কানাগুলি বিন্দুর মালা দিয়ে সুন্দরভাবে সাজান । আরেকটি ট্রিফয়েল আকৃতির, তিনটি সংযুক্ত গোলাকার অংশ দ্বারা গঠিত, তাসের ডেকে ক্লাবের মতো, প্রতিটি বৃত্ত একটি ফুল দিয়ে খোদাই করা। একটি গেরুয়া মাটির ছাঁচ একটি পাতা বা নৌকার আকারের । বেলা আমসত্বের একটি পার্সেল তৈরি করছিলেন, ছাঁচ থেকে সুন্দর নকশা দিয়ে ছাপ দেওয়া আমের ওয়েফার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার নাতির জন্য, যে বিদেশে দেশের খাবারের জন্য ইচ্ছুক ; সে সেগুলিকে জলখাবার হিসাবে খেত বা আমের স্বাদ জাগানোর জন্য দুধের সিরিয়ালে ভিজিয়ে রাখত।
৩০ বছর আগের সেই দুপুরে, শেষবারের মতো এই বাড়িতে আমের ছাঁচ ব্যবহার করা হয়েছিল। কালো গোলাকার ছাঁচের একটিতে আমের রসের চিহ্ন এখনো দেখা যায়, যা মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি সেই চল্লিশটি ছাঁচ, কাঠ, মাটি এবং পাথরের তৈরি; বেলা ১৯৯৭ সালে চলে গেছেন। যে কয়েকজন কারিগর এখনও ছাঁচ খোদাই করার এই শিল্পটি অনুশীলন করেন মিষ্টি তৈরির ব্যবসার জন্য, সবই কলকাতার একটি বাজার থেকে, তারা এখন কেবল কাঠ ব্যবহার করে।
আমসত্ব বা আমের ওয়েফারগুলি অন্তত একটি হাতের মাপের ছাঁচে তৈরি করা হত। আরও বৈচিত্র্য এবং কুশলতা ছোট ছোট ছাঁচে, ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টান্ন, বাঙালিরা যেখানে বসতি স্থাপন করেছে সেখানে সন্দেশএর নকশা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। গুড় বা চিনি মিশিয়ে, এলাচের সুগন্ধযুক্ত, অল্প আঁচে ধীরে ধীরে তৈরী করা। ঘন হয়ে গেলে, তুষারশুভ্র , কোমল ছানা অল্প তৈলাক্ত ছাঁচে রাখা হয়। ঠাণ্ডা হলে, সাবধানে ছাঁচ থেকে সরালে, তারা শঙ্খ, ফুল বা প্রজাপতির আকারে বেরিয়ে আসবে। মুখের মধ্যে মিশিয়ে যাওয়া সন্দেশ বাঙালিদের কাছে চিরকালের একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন । আধুনিক উদ্ভাবন শক্তি এমনকি চকোলেট এবং কমলার স্বাদও চালু করেছে। আধুনিক রেসিপি অনেক বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করেছে। কোরান নারকেল ছানার মতো নরম নয়, কিন্তু দানাদার,তাই কাঠের ছাঁচে তৈরী হয়। শীতকালে, যখন খেজুর থেকে তৈরি গুড় পাওয়া যায়, তখন সন্দেশের একটি নরম গোলাপী প্রকার তৈরি হয়।
বাণিজ্যিকদৃষ্টিতে, বিবাহ বা পারিবারিক উৎসবের জন্য, অর্ডার করা সন্দেশ বহুল পরিমানে তৈরি করা হয়। সাধারণত, এগুলিকে মাছের আকার দেওয়া হয়, যা উর্বরতার প্রতীক বা প্রজাপতি,যা বিবাহের প্রতীক। আমার কাছে যে চল্লিশটি ছাঁচ রয়েছে তা অবশ্য গৃহে ব্যবহারের জন্য, যেখানে জ্যামিতিক আকৃতি প্রাধান্য পাচ্ছে।
আমার স্বামীর মাতামহী এবং তার পিতামহী হাত দিয়ে এই ছাঁচের সেটের কিছু অংশ খোদাই করেছিলেন। বেলার মা কাদম্বিনী, সম্ভবত ১৮৬০ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৪২ সালে মারা গিয়েছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আরও পিছিয়ে গিয়ে, ঠাকুরমার সময় কল্পনা করা একটি অভাবনীয় কাজ বলে মনে হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তারা অবিভক্ত ভারতের ময়মনসিংহ জেলায় বসবাস করতেন, অধুনা বাংলাদেশে। তাদের সহজাত নান্দনিক বোধ এবং শৈল্পিক অভিব্যক্তির প্ররোচনা এই ছাঁচগুলি সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করেছিল। তারা বৃহৎ সব পরিবারের গৃহিণী ছিলেন। নিরবচ্ছিন্ন ব্যস্ততার মধ্যে, গৃহস্থালী যন্ত্রের প্রতিটি দিক সুচারুরূপে চলমান রেখে, কেবল তাদের দ্বিপ্রহরগুলি এই ধরনের শৈল্পিক সৃষ্টির জন্য মুক্ত ছিল। আজ আমি প্রায় এক শতাব্দী পুরানো একটি পরিবারের ঐতিহ্য বহন করছি; নারীসৃষ্টির একটি স্থায়ী প্রতীক।
কাদম্বিনী
পাট ব্যবসায়ী জগদীশ গুহের সচ্ছল পরিবারের মধ্যে, মহিলারা সেই বহু বছর আগে, “রিডিউস , রীউস . রিসাইকেল” — “কমাও, পুনঃব্যবহার, পুনর্ব্যবহার” এই সর্বোত্তম নীতিগুলি অনুশীলন করেছিলেন। জীর্ণ, ভাঙা উপকরণ নুতনভাবে ব্য়বহার করে, উপলব্ধ সামগ্রীর থেকে, সুচারু উপযোগী জিনিস সৃষ্টির জন্য – এই পূরাতন মহিলাদের কৌশল্য় আমাকে প্রশংসা এবং গভীর তৃপ্তিতে পূর্ণ করে। বাংলার বিখ্যাত কাঁথা যা এখন সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়নের আকর্ষণীয় বিষয়, একই ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। বাংলার হালকা শীতের থেকে বাঁচতে তৈরী করা হত, জীর্ণ-শীর্ণ শাড়ির স্তরকে সুকৌশলী আঙুল দিয়ে সাজানো, বিশিষ্ট স্বতন্ত্র ঘন সেলাই, শাড়ীর পাড়ের টানা সুতো দিয়ে ফুল তোলা কাঁথা। ছাঁচের মতো, এগুলিও একসময় বাংলার দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিল, এবং এখন অনেক ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের মতো হ্রাস পাচ্ছে।
ছাঁচের ক্ষেত্রে এই পুনরুদ্ধারমূলক প্রথা বিশেষ করে পাথর দিয়ে তৈরি ছাঁচ তৈরীর সাথে সম্পর্কিত। পাথর বা পিতলের থালা এবং বাটিতে দেবতাদের উদ্দেশ্যে ফল বা মিষ্টির নৈবেদ্য তৈরি করা হত। সময়ের সাথে সাথে পাথরের থালাগুলি ভেঙে যায়। টুকরোগুলোকে ফেলে না দিয়ে , মসৃণ করে, ফুল এবং জ্যামিতিক নকশায় খোদাই করা হয়েছে। সেই পাথরের টুকরোগুলো খোদাই করতে নিশ্চয়ই দক্ষতা ও শক্তি লেগেছে। বেলা বলেছিলেন যে দেশীয় নাপিতদের ব্যবহার করা ধারালো ছুরি, নরুন ব্যবহার করা হত।
আমার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সেটে, পাথরের হালকা রঙের ছাঁচ ১৮ টি রয়েছে। দুটিতে জ্যামিতিক নকশা খোদাই করা হয়েছে। আমি বেলাকে জিজ্ঞাসা করিনি কেন এগুলো বাটি আকৃতির, এবং এগুলো কি বড় আকারের সন্দেশ বা অন্য কিছু তৈরি করতে ব্যবহৃত হত। দুটি ছোট ত্রিভুজাকার কাদামাটির ছাঁচ, যার শুধু এক পাশে নকশা রয়েছে এবং তাদের থেকে ছোট দাঁড় দেখা যায়, যেমন অফিসিয়াল ডকুমেন্ট স্ট্যাম্প; ছানার বড় আকৃতির বলের উপর মোটিফগুলি ছাপানোর জন্য ব্যবহার করা হত হয়ত।
এছাড়াও রয়েছে দুই জোড়া কাঠের ছাঁচ, দুই জোড়া সহজ নকশায়। যখন ছানা জোড়া কাঠের ছাঁচগুলির মধ্যে রাখা হয়, তখন সন্দেশটি দুই দিকেই প্যাটার্ন সহ দেখা দিত; অন্যান্য ছাঁচগুলির থেকে ভিন্ন, যা শুধুমাত্র একপাশে ডিজাইন তৈরি করে। কাঠের ছাঁচ বিশেষ করে নারকেল সন্দেশের জন্য ব্যবহার করা হত।
২৪টি মাটির ছাঁচ রয়েছে এই কালেকশনে। এগুলি বেশিরভাগই কালো, কয়েকটি বাদামী। এখানে আকার এবং ডিজাইনের আরও বৈচিত্র্য রয়েছে; ওভাল বা ডিম্বাকৃতি, অর্ধচন্দ্রাকার, বৃত্ত, পাতা, শঙ্খ। বাংলার মসৃণ নদীমাটি নমনীয়। মাটি মাখার পরে,পছন্দসই আকারে গড়া হত। নরুন দিয়ে ফুল, পাতা, বিমূর্ত নকশা ও নাম খোদাই করা হতো। এই সব মৃদুহাতে করা হত, কারণ মাটি নমনীয় ছিল। ভেজা ছাঁচগুলি রোদে শুকানো হয়। শেষের পর্যায় ছিল তাদের আগুনে সেঁকানো। আগুনের প্রখরতার মাত্রা অনুসারে, রঙটি কালো বা বাদামী হত।
ঐতিহ্যবাহী বাঙালি গৃহে, প্রতিটি আহার মিষ্টান্ন দিয়ে শেষ হয়। সন্দেশ – নরম, হালকা, অতৈলাক্ত – দিনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভোজনে পরিবেশন করা হত। বয়স্ক আত্মীয়স্বজন, বিশেষ করে বিধবারা প্রায়শই এই ধরনের যৌথ-পরিবারের সদস্য়া হতেন, যেখানে পুত্রেরা, তাদের পরিবারের সাথে, একই ছাদের নিচে থাকতেন। এই ছোট দুধের মিষ্টিগুলি তাঁদের জন্য উপযুক্ত ছিল, যেমন ছিল শিশুদের প্রয়োজন। জল বা লেবুর পানীয়ের সাথে সন্দেশ পরিবেশন করা হত, অতিথিদের। আশ্চর্যের কিছু নেই যে গুহ পরিবারের রন্ধনশালায় ঝুড়িভরতি বিভিন্ন আকারের এই ছাঁচ রাখা হত।
দীর্ঘ কোভিড মহামারীর দিনে আমি বেলার ডায়েরি পড়ি। এখানে তিনি তার অত্যন্ত মেধাবী মায়ের প্রশংসা প্রসঙ্গে লিখেছেন, “আমার বাবার বাড়িতে ভোজের জন্য লোকেদের আমন্ত্রণ জানানোর নেশা ছিল। তিনি মাকে সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে মিষ্টি রান্না করতে বলতেন। খুব গর্ব করে ঘোষণা করতেন, এই সব বাড়িতে প্রস্তুত করা হয়েছে।”
বেলার ডায়েরি
সে পরিবারে প্রতিদিন, প্রচুর পরিমাণে সন্দেশ প্রস্তুত করা হত, যার জন্য বাড়ীর গরুর দুধের থেকে ছানা প্রস্তুত হত। জ্যেষ্ঠতা অনুসারে পরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের সাথে প্রথমে পরিবারের প্রধান বা কর্তাকে আহার পরিবেশন করা হত। অনেক পদযুক্ত আহারের শেষে, এক থালা সন্দেশ পরিবেশন করা হত। এখানেই ছাঁচের নকশায় নান্দনিকতার যৌক্তিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরিবারের প্রধানের সম্মুখে পরিবেশিত সন্দেশ তাদের বিভিন্ন স্বাদ, নকশা, আকার দ্বারা স্নেহ, প্রতিপত্তি, প্রশংসার দাবী করত। ভোজনরসিক হয়তো একটি টুকরা তুলে নিতেন, কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির সম্মুখে একটি ভরা থালাই রাখা হত । মহিলারা তাদের পরিবারের পুরুষদের কাছ থেকে তাদের নৈপুণ্যের জন্য প্রশংসার পাত্রী হবার আশা রাখতেন। এরা ছিলেন গৃহবন্দী, কিছুটা শিক্ষিত নারী। তাদের জীবন তাদের সন্তান, আত্মীয়স্বজন এবং তাদের জীবনের পুরুষদের ঘিরে প্রবাহিত হত।
আমার সংগ্রহে নয়টি ছাঁচ আছে যেগুলির গায়ে নাম বা শব্দ খোদাই করা আছে। একটি কাঠের তৈরি বাকিগুলো মাটির। অক্ষর সহ এই ছাঁচ, আমি বিশেষ প্রশংসার সাথে দেখি। মহিলারা মিরর রাইটিং বা আয়নায় প্রতিফলন পদ্ধতিতে ছাঁচেতে অক্ষর বা শব্দগুলি খোদাই করেছিলেন। যাতে ছানার মধ্যে চাপ দিলে ছাঁচ থেকে তোলার সময় সন্দেশে নামগুলো সঠিকভাবে বের হয়ে আসে।
তার মধ্যে ছয়জনের নাম চেনা যায়। আমার স্বামীর মাতামহ জগদীশ গুহ ব্রিটিশদের দ্বারা রায়বাহাদুরের সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পূর্ব বাংলায় পাট রপ্তানিকারক ছিলেন। তার মা এবং তার স্ত্রী কাদম্বিনী দুজনেই স্নেহের সাথে তিনটি ওভাল ছাচেঁ তার নাম খোদাই করেছিলেন। আরও হতে পারে, তবে এই কয়েকটি বেলার ভাগে পড়েছিল। পুরুষের সাফল্যে নারীদের গর্ব “শ্রীযুক্ত বাবু রায়বাহাদুর” লিপিতে জ্বলজ্বল করে। শ্রীযুক্ত ইংরেজিতে মাস্টার বা স্কয়ারে এর সমতুল্য। আরেকটিতে লেখা “শ্রীযুক্ত বাবু জগদীশ চন্দ্র।” তৃতীয়টি হৃদয়গ্রাহী: “জয় জগদীশ।” জগদীশ, বা বিশ্বের প্রভু, সর্বশক্তিমান। এছাড়াও, হিন্দু পূজায় একটি জনপ্রিয় প্রার্থনার প্রথম দুটি শব্দ। পরিবারের প্রধানের নাম, ঈশ্বরের নামের সাথে সংমিশ্রণে একটা হাল্কা রসিকতার আভাস পাওয়া যায়। কাদম্বিনী তার বড় ছেলে, লন্ডনে প্রশিক্ষিত ব্যারিস্টারের নামে একটি ছাঁচও তৈরি করেছিলেন: ‘শ্রীযুক্ত বাবু হেমন্ত”। তখন জামাইদেরও সম্মান দেওয়া হত। বেলার বড় বোনের বিয়ে যাঁর সাথে হয়েছিল তাঁর নাম ওভাল ছাঁচে লেখা আছে, “শ্রীযুক্ত বাবু যতীন্দ্র গুহ।”
একটি ছোট মাটির ছাঁচ সহজভাবে বলে, “জলপান”। আরেকটি কাঠের ছাঁচে খোদাই করা লিপি অবশ্য চমকপ্রদ। এটিতে লেখা “অবাক” বা আশ্চর্য । সেই ছাঁচ থেকে তৈরি করা সন্দেশ কি কিছু অপ্রত্যাশিত স্বাদ বা উপাদান দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল, পরিবেশন করা ব্যক্তিকে অবাক করার উদ্দেশ্যে ? সম্ভবত ছাঁচ এবং মিষ্টির নির্মাতা আশা করেছিলেন যে তার সৃষ্টির নিখুঁততা এবং দক্ষতা লোকেদের অবাক করবে। আজ এটা কল্পনা করা আনন্দদায়ক যে খাবার তৈরি এবং পরিবেশনের দৈনন্দিন রুটিন থেকে উদ্ভূত এই ধরনের যোগাযোগ, হাস্যরস সম্ভব ছিল।
খোদাই করা শব্দের শেষ ছাঁচটি হল “মাতরম” – মা। এটি উল্লেখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলা ঔপনিবেশিকতা বিরোধী ও স্বাধীনতার চিন্তায় উত্তাল ছিল। সেই প্রারম্ভিক সময়ে, জাতীয়তাবাদী আবেগগুলি মায়ের মূর্তিতে জাতিকে কল্পনা করতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। সংস্কৃতের একটি বিখ্যাত গান, “বন্দে মাতরম” , যা এখন ভারতীয় “জাতীয় গান” হিসাবে পূজিত, স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য একটি মিছিলকারী স্লোগান হয়ে ওঠে এবং ঔপনিবেশিক সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়। এটা একান্তই সম্ভব যে, জাতির প্রতি ভালবাসা এবং বাংলার আরাধ্য়া দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা, মিলিত হয়ে এমন শক্তিশালী তরঙ্গে একত্রিত হয়েছিল যে তা রক্ষণশীল বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়েছিল। মহিলারা, প্রবাহিত আলোড়নে সাড়া দিয়ে, তাদের ছাঁচ সৃষ্টিতে তাদের অনুভূতিকে ,তাদের প্রতিদিনের “মিষ্টি” প্রস্তুতিতে তাদের শ্রদ্ধাকে গভীরভাবে প্রকাশ করেন। একভাবে,যেন তাঁরা ঔপনিবেশিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, ভারত মাতাকে বাঁচানোর আবেদন সম্পর্কে তাদের সচেতনতা প্রদর্শন করেছিলেন এবং তাদের পরিবারের পুরুষদের তাদের কর্তব্যের ইঙ্গিত দিলেন।
Shonali Charlton, 2022
১৯৯০ এর দশকে ডায়েরিতে বেলা বলেছেন যে তার মা বেঁচে থাকলে তার বয়স ১২৫ বছর হত। ২০২১-এ ব্য়াবধান এখন প্রায় দেড় শতাব্দী। সময়ের এবং ভৌগলিক দূরত্বের দিক থেকে এই ছাঁচগুলির অস্তিত্ব বিস্ময়কর। অবিভক্ত ভারতের এক কোণে ময়মনসিংহ থেকে উত্তর ভারতীয় সমভূমির এলাহাবাদে, যেখানে আমার স্বামীর পরিবার একসময় বাস করতেন , এবং তারপরে দিল্লিতে যেখানে বেলার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, এই ছাঁচগুলি টিকে আছে। এটা স্মরণযোগ্য় যে তাদের এই যাত্রার প্রতিটি পদে ব্যবহৃত করা হয়েছিল। বেলা তার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত দক্ষতা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন এবং আমরা তাঁর হাতের তৈরী সন্দেশের মিষ্টি স্বাদ গ্রহণ করার সৌভাগ্য পেয়েছি। আমি প্রায় ভাবি এই ছাঁচের যাত্রা কোথায় শেষ হবে। কয়েকটা সম্ভবত যুক্তরাজ্যে আমার মেয়ের কাছে থাকবে তার গূণী পিতামহীর স্মৃতিচিহ্ণ হিসাবে । হয়তো কোনো মিউজিয়ামে আগামী প্রজন্মের জন্য রাখা থাকবে । এই ছোটো মাটির,পাথরের টুকরোগুলিতে যে কথা লুকিয়ে আছে ,তা যেন ভবিষ্য়তে হারিয়ে না যায়।
বেলা
I think it is an excellent piece of anecdotal writing where we see personal life experienes are woven intricately with the creation of diecast moulds for sweets by Bengali ladies.